বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

শ’বে কদরের আমল…

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখে শ'বে কদরের রাত্রিতে প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর ১ বার এবং সূরা এখলাছ ২৭ বার দ্বারা ৪ রাকয়াত নামায পড়ে, তাহলে সে সমস্ত গুনাহ্‌ থেকে পাক হয়ে যাবে, যেন মায়ের উদর হতে অদ্যই ভুমিষ্ঠ হলো। আল্লাহ তা'আলা তাকে বেহেশ্‌তের মধ্যে ১০০০ বালাখানা দান করবেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি শ'বে কদরের রাত্রিতে সূরা ফাতিহার পর ১ বার সূরা কদর ও ৩ বার সূরা এখলাছ দ্বারা ২ রাকয়াত নফল নামায পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তাকে শ'বে কদরের রাত্রের সমস্ত সওয়াব দান করবেন, তার জন্য রুজী বৃদ্ধি করবেন এবং তাকে হযরত ইদ্রীছ (আঃ), হযরত শোয়ায়েব(আঃ), হযরত ইউনুছ (আঃ), হযরত দাঊদ (আঃ) ও হযরত নূহ (আঃ) এর সওয়াব দান করবেন। তাকে আল্লাহ তা'আলা বেহেশ্‌তের মাশরেক থেকে মাগরেব পর্যন্ত বড় একটা শহর দান করবেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখের রাত্রিতে প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পর ৩ বার সূরা কদর ও ৫০ বার সূরা এখলাছ দ্বারা ৪ রাকয়াত নামায পড়বে এবং সালাম ফিরিয়ে সেজদায় গিয়ে পড়বে-

"ছুব হানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার"

অতপর সেই ব্যক্তি যেই দোয়া আল্লাহ তা'আলার দরগাহে চাইবে তা অবশ্যই কবুল হবে (ইনশা আল্লাহ !)। আল্লাহ তা'আলা তাকে অসীম নেয়ামত দান করবেন এবং সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করবেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখের রাত্রিতে নামাযের নিয়ত করে গোসল করে- পা ধুইবার পুর্বেই আল্লাহ তা'আলা তার সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করে দিবেন।

তবে ৪ প্রকার ব্যক্তি শ'বে কদরের এই সকল অফুরন্ত নেয়ামত থেকে বঞ্চিত-

১) সর্বদা যে ব্যক্তি মদ্যপানে আসক্ত,

২) যে ব্যক্তি পিতা-মাতার অবাধ্য,

৩) যে আত্মীয়-স্বজনের সংশ্রব ত্যাগ করে এবং

৪) যে ব্যক্তি মুসলমানের সাথে শত্রুতা করে।

আল্লাহ আমাদের এসব থেকে রক্ষা করুন এবং হেদায়েত দিন।

আমার কথাঃ-

যদিও আমরা জানি এবং এটা এখন মোটামুটি স্বীকৃতি পেয়ে গেছে যে রমযানের ২৭ তারিখ দিবাগত রাত্রেই হলো মহিমাম্বিত রাত শ'বে কদর, তারপরেও আমি বলবো, এই বিশ্বাস নিয়ে হাত-পা গুটিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারন এখনও পর্যন্ত আমি কোন সহীহ্‌ হাদীস পাইনি যা ২৭ তারিখ কেই শ'বে কদর হিসেবে নিশ্চিত করেছে (যদিও আমি হাদিসে বিশেষ পন্ডিত নই)।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন শ'বে কদরের তারিখটা ওহী মারফত প্রাপ্ত হয়ে যখন সাহাবাদের জানাতে আসেন, তখন দুই সাহাবার বাক-বিতন্ডা দেখে তাদের সামলাতে গিয়েই তিনি তারিখটা ভুলে যান (সবই আল্লাহর ইচ্ছা)। এবং তারপর তিনি নিজেও আর কাউকে এব্যপারে স্পষ্ট কোন ধারনা দেননি।

হুজুর পাক (সাঃ) শ'বে কদরের ব্যপারে আবু ছাইদ (রাঃ) কে ২১ তারিখ, আলী (রাঃ) কে ২৩ তারিখ, আবুবকর সিদ্দিকী (রাঃ) কে ২৭ তারিখ এর কথা বলেছেন। আমার নবী মিথ্যা বলেননা, এবং এব্যপারে ভুল বলাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব এখানে কোন এক জায়গায় রহস্য আছে। হয়তো শ'বে কদর কোন বিশেষ কারও জন্যে বিশেষ কোন দিনে। হয়তো আবু ছাইদ (রাঃ) এর জন্য তা ২১ তারিখ ছিলো, আলী (রাঃ) এর জন্য ২৩ আর সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) এর জন্য ২৭, হয়তো আমার জন্য অন্য কোন তারিখ। অবশ্য এটা আমার নিজের ধারনা, আমি এতে কাউকে বিশ্বাস করতে বলছিনা, বরং অনুরোধ করবো কেউ যেন বিভ্রান্ত না হোন। যাইহোক, তবে একথা নিশ্চিত যে শ'বে কদর রমযানের শেষ বেজোড় ৫ রাত্রের ভিতরেই আছে। আর যেহেতু শ'বে কদর তালাশ করার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে বেশী, তাই কেননা আমরা এই ৫ টা রাত্রিই একটু কষ্ট করি? আমার মতে এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন, আমীন।

আরেকটা কথা- অনেকে বলে, যারা সারা বছর ফরজ আদায় করেনা, তাদের এসব নফল নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। আমার কাছে ব্যপারটা মোটেও গ্রহনযোগ্য না। কারন- ফরজ এর জন্য তাদের তাগিদ দেওয়া উচিৎ, আদায় করুক আর না করুক সেটা তাদের ব্যপার। নফলের জন্য তাগিদ দিতে হয়না, কিন্তু কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় নফল আদায় করতে চায়, তাকে বাধা দেওয়া মোটেও উচিৎ হবেনা। কে জানে, আল্লাহ হয়তো তাকে এই নফলের ওছিলায় হেদায়েত দেবে আর সে এরপর থেকে ফরজের প্রতি মনোযোগীও হতে পারে। কারন মহান রাব্বুল আলামীন বান্দাকে হেদায়েত ও মাফ করার জন্য নানান ওছিলা খোজেন। তাই তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া উচিৎ।

শ'বে কদরের রাত্রে এই দোয়া পড়া আবশ্যকঃ-

"আল্লহুম্মা ইন্নাকা আফুয়ুন তুহিব্বুল আফুয়ুন ফায়াফু আন্নী ইয়া গাফুরু ইয়া গাফুরু ইয়া গাফুরু"।

কোন মন্তব্য নেই: