রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

শ’বে কদরের ফজ়িলত

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের জন্য শ'বে কদরে দন্ডয়মান হয় অর্থাৎ নামায পড়ে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ হয়ে যায়।"

শ'বে কদর একটি মহান রাত্রি। এই রাত্রি বরকত ও রহমত পুর্ণ, অন্য কোন রাত্রি এই রাত্রির মর্যাদায় পৌছোতে পারেনা। হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা শ'বে কদরের সহিত অন্য রাত্রিসমুহকেও সৌন্দর্য দান করেছেন।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"রাত্রিসমুহের মধ্যে শ'বে কদরই উত্তম।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"রমযানের শেষ ১০ রাত্রির মধ্যে শ'বে কদরকে অনুসন্ধান কর এবং উহার মধ্যে বেজোড় রাত্রি সব অনুসন্ধান কর অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখ।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যদি তোমরা চাও যে তোমাদের কবর নুরের দ্বারা উজ্জ্বল হোক, তা হলে তোমরা শ'বে কদরের রাত্রে এবাদত কর।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি শ'বে কদরকে জিন্দা রাখে, কেয়ামতের দিন তার দিল মুরদা হবেনা এবং আল্লাহ ত'আলা তার ছগীরা-কবীরা অর্থাৎ ছোট বড় সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করে দেবেন।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি শ'বে কদরকে জিন্দা রাখে, সে একশত বছরের সওয়াব পাইবে। এর কারন এই যে আল্লাহ তা'আলা শ'বে কদরকে লুক্কায়িত করেছেন, যেন বান্দা উহা তালাশ করবার আগ্রহ রাখে অর্থাৎ প্রেমিকদের মত অনুসন্ধান করে।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি শ'বে কদর পাবে, আল্লাহ তা'আলা তার উপর দোযখের আগুন হারাম করে দিবেন এবং তার সমস্ত অভাব পুর্ণ করে দেবেন।"

হযরত ছাঈদ (রাঃ) বলেছেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাস করলাম,

"হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! শ'বে কদরের রাত্র কোনটি?" তিনি বললেন, "হে আবু ছাঈদ, উহা রমযানের ২১ তারিখে। "পুনরায় হযরত আলী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, "হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! রমযানের মর্যাদাপুর্ণ রাত্রি কোনটি?" তিনি বললেন, "হে আলী (রাঃ), উহা রমযানের ২৩ তারিখে। "পুনরায় হযরত সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, "হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! এই পবিত্র মাসে কোন রাত্রি শ'বে কদর?" হযরত বললেন, "আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ), রমযান মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে উহা অনুসন্ধান কর, তাহা হলে তুমি উহাকে পাবে।"

         অধিকাংশ ওলামা এটার উপর একমত। ইমাম আজম (রঃ) এর অনেক রেওয়াত হতে এই তারিখ প্রমানীত হয়েছে। হযরত আবু হানিফা (রঃ) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে শ'বে কদর দান করেছেন, "লাইলাতুল কদর" -এর ৯টি হরফ আছে এবং "লাইলাতুল কদর" সূরা কদরের মধ্যে ৩বার এসেছে। সুতরাং ৯ হরফকে ৩বার একত্র করলে ৩ X ৯ = ২৭ হয়। এতে ইঙ্গিত হয় যে অবশ্যই ২৭ তারিখের রাত্রিকে শ'বে কদর বলা হয়। অধিকাংশ বুজুর্গগন এই রাত্রিকে শ'বে কদর বলে মেনে নিয়েছেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি রমযান মোবারকের ২৭ তারিখ রাত্রিকে জিন্দা রাখে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য ২৭ হাজার বছরের এবাদতের সওয়াব লেখেন এবং তার জন্য বেহেশ্‌তে কত সংখক ঘর তৈরী করবেন তা আল্লাহ তা'আলাই জানেন।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখ রাত্রিকে জিন্দা রাখবে, আল্লাহ তা'আলা কেয়ামতের দিন তাকে বেহেশ্‌তে নেবার জামীন হবেন।"

আল্লাহ তা'আলা ফরমান- "ইন্না আনজালনাহু !"

"হে মুহাম্মদ (সাঃ), আমি নিশ্চয়ই জীব্রাইল (আঃ) এর দ্বারা আপনার উপর উহাকে অর্থাৎ কুরআনকে নাজিল করেছি।"

বহু কিতাবে বর্ণিত আছে, যখন জীব্রাইল (আঃ) আল্লাহর তরফ থেকে সমস্ত কুরআন শরীফ একই সময়ে "লাওহে মাহফুজে" পৌছে দিয়েছিলেন, তখন শ'বে কদরের রাত্রি ছিলো। পুনরায় সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প অল্প করে হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর নাজিল করা হয়েছিলো।

তৎপর আল্লাহ তা'আলা ফরমান- "ফি লাইলাতিল কাদরি।"

"কুরআন কে "লাইলাতুল কাদরে" অর্থাৎ শ'বে কদরের রাত্রে নাজিল করেছি"

"ওয়া মা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি।"

"হে মুহাম্মদ (সাঃ)! আপনি কি জানেন, "লাইলাতুল কদর" অর্থাৎ শ'বে কদরের বউর্গী কি?"

"লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহরি।"

"শ'বে কদর হাজার মাসের রাত্রি হইতে উত্তম।" অর্থাৎ আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি এই রাত্রে এবাদত করবে, তাকে আমি হাজার মাসের এবাদতের সওয়াব হতেও বেশী সওয়াব প্রদান করবো।

এই রাত্রিকে আল্লাহ তা'আলা এই জন্য খাছ করেছেন যে, একদিন হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজ উম্মতের মধ্যে হজরত শামাউন (আঃ) (যিনি বনী ইসরায়েলদের মধ্যে খুব বড় একজন আবেদ অর্থাৎ এবাদতকারী ছিলেন) তার বিষয়ে একটি গল্প বলছিলেন। যিনি হাজার মাস এবাদত করেছিলেন এবং কাফেরদের সাথে জেহাদ করেছিলেন। আল্লাহর রাস্তায়ই জেহাদ করেছিলেন, তার গল্প খুব বড়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর আছহাবগন আফছোছ করে বললেন, "হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আপনার উম্মতের হায়াত এরুপ হবে না, তাহা হলে তারাও ওইরুপ এবাদত করতে পারতো।" হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তখন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তখন সূরা কদর নাজিল হলো।

 

কোন মন্তব্য নেই: