শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১০

ইসলাম কি আরব কেন্দ্রিক...?





বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম


(প্রথমেই বলে রাখি যে আমি এখানে শুধু মাত্র আমার জ্ঞ্যান যেটুকু আমি জানি তাই সবার সাথে ভাগাভাগি করতেচাচ্ছি যদি এখানে কোন ভুল ধরা পড়ে, তবে দয়া করে সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি এবং বন্ধুসুলভ আচরনের মাধ্যমে তা শুধরানোর চেষ্টাকরাই ভালো হবে দয়া করে কেউ জটিলতা সৃষ্টি করবেন না)

বেশীরভাগ সময়ই যখন আমরা কোন ইসলামী কাহিনী শুনি, সেটা দেখি আরব বা তার আশপাশের নগর থেকেআসছে কিন্তু ইসলাম কোন জাতিগত ধর্মতো নয় তাহলে কেন শুধু আরবদের কাহিনী আমাদের শুনতে হয়? স্বভাবতইএধরনের প্রশ্ন আসতে পারে তাদের মনে যারা সব ক্ষেত্রে খুত খোজার চেষ্টা করে বা যারা সত্যিকার অর্থেই কিছু জানার আগ্রহরাখে

তবে আমি যতদুর দেখেছি এবং বুঝেছি, তাতে আমার ধারনাগুলো হল-

আরব দেশটা পৃথিবীর মানচিত্রে মাঝখানের দিকে অবস্থিত আর পবিত্র কাবা ঘর এই পৃথিবী নামক গ্রহের ঠিকমধ্যবর্তী একটা অবস্থানে স্থাপিত

যখন আদম হাওয়া () কে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে প্রেরন করা হয়, তাদেরকে কে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পাঠানোহয় আমি গল্প শুনেছি যে, আদমকে () সাগরে ফেলা হয়েছিল এবং হাওয়াকে () পাঠানো হয়েছিলো জমিনে যা বর্তমানেআফ্রিকা হিসেবে পরিচিত আমি আরও শুনেছি যে আদম ছিল শ্বেতাঙ্গ এবং হাওয়া ছিল কৃষাঙ্গ এখানে আরও উল্লেখ্য যেতখন পৃথিবীর জমিন একসাথে ছিল অর্থাৎ বিভিন্ন মহাদেশের বিভাজন ছিলনা

এই অবস্থায় যখন আদম এবং হাওয়া () আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে তখন তারা জমিনেরকেন্দ্রের দিকে (বর্তমান আরবের দিকে) এগুতে থাকে এবং বহু বছর পর যখন তাদের তওবা হুজুর পাক (সাঃ) এর ওছিলায়কবুল হয়, তখনই তারা একে অপরকে খুজে পায়েমন এক স্থানে যা বর্তমানে আরাফা ময়দান হিসেবে পরিচিত তারপরআরাফার পাশেই তারা পৃথিবীর প্রথম ঘর তৈরী করে যা এখন পবিত্র কাবা ঘর হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত আর এখানথেকেই ইসলামের আরব কেন্দ্রিক কাহিনী শুরু

এরপর পরবর্তী নবীগন একজনের পর একজন আসতে থাকে, এবং সবাই একটা বার্তা নিয়েই আসে, “লা- ইলাহাইল্লাল্লাহ”, তবে পাশাপাশি তারা কিছু শিক্ষা মানুষ কে দিতে থাকে যেমন, আদম () এর পর শীছ () এর সময় মানুষ কাপড়বোনা, জমি চাষ করা ইত্যাদি শিক্ষা পায় আমি কিছু রহস্য পত্রিকা এবং সেবা প্রকাশনীর অনেক সায়েন্সফিকশন পড়েছিযেখানে পেয়েছি যে প্রাথমিক যুগে যখন মানুষ কিছু জানতোনা, তখন ভিন গ্রহের প্রানীরা এসে মানুসকে অনেক কিছু শিখিয়েদিয়ে গিয়েছিল আবার আমি শীছ () কিছু ঘটনা শুনেছি যে, যখন তারা খাবার বা চাষাবাদ করতে জানতো না, তখন তারাএকদিন দেখলো যে মাঠে একদল লোক জমি চাষ করছে, কিছু মহিলা গাছের বাকল দিয়ে কাপড় তৈরী করছে ইত্যাদি তারাতাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছিলো কিন্তু কারা লোকগুলা? এব্যপারে কোন হদিস আমি পাইনি, আল্লাহ আর তার প্রিয়বান্দারাই ভাল জানেন

মানুষ বংশ বিস্তার করতে করতে জমিনে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, এবং ব্যবিলনে মানব সভ্যতার তৃতীয় নবী ইদ্রীস () আসেন, তার সময় মানুষের লেখা পড়ার শিক্ষা শুরু হয়, মনে হয় ব্যবিলনই প্রথম লেখালেখির প্রচলন শুরু হয় ইদ্রিস () তার অনুসারীদের নিয়ে ব্যবিলন থেকে মিশর চলে আসেন, অর্থাৎ আরেক আরব এলাকা

এরপর নূহ () আসেন এবং তার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে যুগান্তকারী একটা বস্তু উপহার দেন- নৌকা নূহেরনৌকাই পৃথিবীর প্রথম নৌকা এবং বন্যা শেষ হওয়ার পর নূহ () এর নৌকা বর্তমান তুরস্কের এক পাহাড়ে গিয়ে আটকায়যার নিশানা এখনও তুরস্কে আছে তুরস্ক আরেকটি আরব দেশ এর পর নুহ () এক বংশধর ভারতের দিকে চলে আসে যারইতিহাস খুবই অস্পষ্ট (আমার কাছে) তবে লোক জনের ভীড় থাকে আরব কে কেন্দ্র করেই যদিও নূহ এর বন্যার পর বহুবছর কাবা ঘর মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকে এবং মক্কা নগরী থাকে জনশুন্য কিন্তু মক্কার চারপাশে জনবস্তি গড়ে উঠেছিলবহুত আর তারপর ইব্রাহীম () ঈসমাইল () এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মক্কা কে আবার জনবহুল করে তুলেন


ঈসমাইল () এবং মক্কা পুনরুত্থান এর পর এই নপগরীতে আর কোন নবী আসেনি কিন্তু নবী আসা থেমে থাকেনি মিশর, তুরস্ক, এবং মক্কার আশপাশের নগরীতে হযরত মূসা মিশর থেকে জেরুজালেম চলে আসেন, এবং এখানে একাধারে দাউদ, সোলায়মান এবং সর্বশেষ ইসরায়েলী নবী ঈসা প্রেরীত হন আর তারপর সময় আসে আবার মক্কার, যেখানে একদিন সর্বপ্রথমনবী তার যাত্রা শুরু করেছিলো, সেখানেই আবার সর্বশেষ নবী (সঃ) আবির্ভুত হন

দেখা যাচ্ছে এযাবৎ সব কিছুই আরব কেন্দ্রিক হচ্ছে কিন্তু কেন? পৃথিবীতে কি আর কোন দেশে মানুষ ছিলনা? তাদেরকাছে কেন ইস্লামের নবী আসেনি? আল্লাহ কি তাদের পথা দেখানোর জন্য কাউকে পাঠাননি? আমার মতে এখানে টা উত্তরআছে-

) নবী পাঠানোর প্রক্রিয়াটা চলছিলো মানব সভ্যতার প্রাথমিক যুগে আর যখন সর্বশেষ নবী () আসেন, তখনওপৃথিবীর প্রান্তে বহুল জনবসতি গড়ে উঠেনি

) আল্লাহ যুগে যুগে বহু নবী পাঠিয়েছেন যাদের মাত্র কয়েকজনের নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তুএছাড়াও যে তিনি নবী পাঠিয়েছে ( এক লক্ষেরও বেশী ) সেটা মুসলিম উলামারা স্বীকার করে এর মানে হল, কে জানে হয়তোআমাদের মাঝেও কেউ এসেছিলো অথচ আমরা টের পাইনি, সে তার কাজ করে গেছে

আমি দেখেছি হিন্দু দের প্রধান গ্রন্থ বেধ ( রামায়ন বা গীতা হিন্দুদের প্রধান গ্রন্থ কিনা আমি নিষচিত নই, তবে আমিযতদুর জানি এগুলা রচনা করা হয়েছিল মুনী ঋষীরা যারা মনরঞ্জনের মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলো) বেধ এমনঅনেক বাক্য আছে যা পবিত্র কোরআনের সাথে মিলে যায় এবং এমন অনেক বাক্য আছে যা একজন শেষ যুগে এওজন মহাঋষীর আবির্ভাবের কথা বলে যা মুহাম্মদ () এর সাথে মিলে যায় অথচ এই বেধ কোথা থেকে এসেছিলো, কে এর রচয়ীতা, এটা এওটা রহস্য যদিও বেধের ৭০ ভাগই এখন হারিয়ে গেছে কিন্তু এখনও বেধের মধ্যে অনেক রহস্য আছে যা চর্চা করলেমানুষের অনেক ভুল ভেঙ্গে যেতে পারে কিন্তু হিন্দুরা বেধ নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাতে চায়না তারা মনরঞ্জনে মননিবেশঅরেছে

তবে এটা ঠিক যে আল্লাহ কখনই কোন জাতিকে অবিভাবকহীন করে রাখেননি, সবার কাছেই তিনি তার রাসুলপাঠিয়েছেন কিন্তু শয়তানও বসে থাকেনি, সে মানুষ কে প্রতি মুহুর্তে দিকভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে আল্লাহ আমাদের মাফকরুন, এবং সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন, এবং আমাদের জান্নাতের পথে কবুল করুনআমীন

বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

শ’বে কদরের আমল…

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখে শ'বে কদরের রাত্রিতে প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর ১ বার এবং সূরা এখলাছ ২৭ বার দ্বারা ৪ রাকয়াত নামায পড়ে, তাহলে সে সমস্ত গুনাহ্‌ থেকে পাক হয়ে যাবে, যেন মায়ের উদর হতে অদ্যই ভুমিষ্ঠ হলো। আল্লাহ তা'আলা তাকে বেহেশ্‌তের মধ্যে ১০০০ বালাখানা দান করবেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি শ'বে কদরের রাত্রিতে সূরা ফাতিহার পর ১ বার সূরা কদর ও ৩ বার সূরা এখলাছ দ্বারা ২ রাকয়াত নফল নামায পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তাকে শ'বে কদরের রাত্রের সমস্ত সওয়াব দান করবেন, তার জন্য রুজী বৃদ্ধি করবেন এবং তাকে হযরত ইদ্রীছ (আঃ), হযরত শোয়ায়েব(আঃ), হযরত ইউনুছ (আঃ), হযরত দাঊদ (আঃ) ও হযরত নূহ (আঃ) এর সওয়াব দান করবেন। তাকে আল্লাহ তা'আলা বেহেশ্‌তের মাশরেক থেকে মাগরেব পর্যন্ত বড় একটা শহর দান করবেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখের রাত্রিতে প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পর ৩ বার সূরা কদর ও ৫০ বার সূরা এখলাছ দ্বারা ৪ রাকয়াত নামায পড়বে এবং সালাম ফিরিয়ে সেজদায় গিয়ে পড়বে-

"ছুব হানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার"

অতপর সেই ব্যক্তি যেই দোয়া আল্লাহ তা'আলার দরগাহে চাইবে তা অবশ্যই কবুল হবে (ইনশা আল্লাহ !)। আল্লাহ তা'আলা তাকে অসীম নেয়ামত দান করবেন এবং সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করবেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন -

যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখের রাত্রিতে নামাযের নিয়ত করে গোসল করে- পা ধুইবার পুর্বেই আল্লাহ তা'আলা তার সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করে দিবেন।

তবে ৪ প্রকার ব্যক্তি শ'বে কদরের এই সকল অফুরন্ত নেয়ামত থেকে বঞ্চিত-

১) সর্বদা যে ব্যক্তি মদ্যপানে আসক্ত,

২) যে ব্যক্তি পিতা-মাতার অবাধ্য,

৩) যে আত্মীয়-স্বজনের সংশ্রব ত্যাগ করে এবং

৪) যে ব্যক্তি মুসলমানের সাথে শত্রুতা করে।

আল্লাহ আমাদের এসব থেকে রক্ষা করুন এবং হেদায়েত দিন।

আমার কথাঃ-

যদিও আমরা জানি এবং এটা এখন মোটামুটি স্বীকৃতি পেয়ে গেছে যে রমযানের ২৭ তারিখ দিবাগত রাত্রেই হলো মহিমাম্বিত রাত শ'বে কদর, তারপরেও আমি বলবো, এই বিশ্বাস নিয়ে হাত-পা গুটিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারন এখনও পর্যন্ত আমি কোন সহীহ্‌ হাদীস পাইনি যা ২৭ তারিখ কেই শ'বে কদর হিসেবে নিশ্চিত করেছে (যদিও আমি হাদিসে বিশেষ পন্ডিত নই)।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন শ'বে কদরের তারিখটা ওহী মারফত প্রাপ্ত হয়ে যখন সাহাবাদের জানাতে আসেন, তখন দুই সাহাবার বাক-বিতন্ডা দেখে তাদের সামলাতে গিয়েই তিনি তারিখটা ভুলে যান (সবই আল্লাহর ইচ্ছা)। এবং তারপর তিনি নিজেও আর কাউকে এব্যপারে স্পষ্ট কোন ধারনা দেননি।

হুজুর পাক (সাঃ) শ'বে কদরের ব্যপারে আবু ছাইদ (রাঃ) কে ২১ তারিখ, আলী (রাঃ) কে ২৩ তারিখ, আবুবকর সিদ্দিকী (রাঃ) কে ২৭ তারিখ এর কথা বলেছেন। আমার নবী মিথ্যা বলেননা, এবং এব্যপারে ভুল বলাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব এখানে কোন এক জায়গায় রহস্য আছে। হয়তো শ'বে কদর কোন বিশেষ কারও জন্যে বিশেষ কোন দিনে। হয়তো আবু ছাইদ (রাঃ) এর জন্য তা ২১ তারিখ ছিলো, আলী (রাঃ) এর জন্য ২৩ আর সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) এর জন্য ২৭, হয়তো আমার জন্য অন্য কোন তারিখ। অবশ্য এটা আমার নিজের ধারনা, আমি এতে কাউকে বিশ্বাস করতে বলছিনা, বরং অনুরোধ করবো কেউ যেন বিভ্রান্ত না হোন। যাইহোক, তবে একথা নিশ্চিত যে শ'বে কদর রমযানের শেষ বেজোড় ৫ রাত্রের ভিতরেই আছে। আর যেহেতু শ'বে কদর তালাশ করার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে বেশী, তাই কেননা আমরা এই ৫ টা রাত্রিই একটু কষ্ট করি? আমার মতে এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন, আমীন।

আরেকটা কথা- অনেকে বলে, যারা সারা বছর ফরজ আদায় করেনা, তাদের এসব নফল নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। আমার কাছে ব্যপারটা মোটেও গ্রহনযোগ্য না। কারন- ফরজ এর জন্য তাদের তাগিদ দেওয়া উচিৎ, আদায় করুক আর না করুক সেটা তাদের ব্যপার। নফলের জন্য তাগিদ দিতে হয়না, কিন্তু কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় নফল আদায় করতে চায়, তাকে বাধা দেওয়া মোটেও উচিৎ হবেনা। কে জানে, আল্লাহ হয়তো তাকে এই নফলের ওছিলায় হেদায়েত দেবে আর সে এরপর থেকে ফরজের প্রতি মনোযোগীও হতে পারে। কারন মহান রাব্বুল আলামীন বান্দাকে হেদায়েত ও মাফ করার জন্য নানান ওছিলা খোজেন। তাই তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া উচিৎ।

শ'বে কদরের রাত্রে এই দোয়া পড়া আবশ্যকঃ-

"আল্লহুম্মা ইন্নাকা আফুয়ুন তুহিব্বুল আফুয়ুন ফায়াফু আন্নী ইয়া গাফুরু ইয়া গাফুরু ইয়া গাফুরু"।

রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

শ’বে কদরের ফজ়িলত

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের জন্য শ'বে কদরে দন্ডয়মান হয় অর্থাৎ নামায পড়ে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ হয়ে যায়।"

শ'বে কদর একটি মহান রাত্রি। এই রাত্রি বরকত ও রহমত পুর্ণ, অন্য কোন রাত্রি এই রাত্রির মর্যাদায় পৌছোতে পারেনা। হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা শ'বে কদরের সহিত অন্য রাত্রিসমুহকেও সৌন্দর্য দান করেছেন।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"রাত্রিসমুহের মধ্যে শ'বে কদরই উত্তম।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"রমযানের শেষ ১০ রাত্রির মধ্যে শ'বে কদরকে অনুসন্ধান কর এবং উহার মধ্যে বেজোড় রাত্রি সব অনুসন্ধান কর অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখ।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যদি তোমরা চাও যে তোমাদের কবর নুরের দ্বারা উজ্জ্বল হোক, তা হলে তোমরা শ'বে কদরের রাত্রে এবাদত কর।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি শ'বে কদরকে জিন্দা রাখে, কেয়ামতের দিন তার দিল মুরদা হবেনা এবং আল্লাহ ত'আলা তার ছগীরা-কবীরা অর্থাৎ ছোট বড় সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করে দেবেন।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি শ'বে কদরকে জিন্দা রাখে, সে একশত বছরের সওয়াব পাইবে। এর কারন এই যে আল্লাহ তা'আলা শ'বে কদরকে লুক্কায়িত করেছেন, যেন বান্দা উহা তালাশ করবার আগ্রহ রাখে অর্থাৎ প্রেমিকদের মত অনুসন্ধান করে।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি শ'বে কদর পাবে, আল্লাহ তা'আলা তার উপর দোযখের আগুন হারাম করে দিবেন এবং তার সমস্ত অভাব পুর্ণ করে দেবেন।"

হযরত ছাঈদ (রাঃ) বলেছেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাস করলাম,

"হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! শ'বে কদরের রাত্র কোনটি?" তিনি বললেন, "হে আবু ছাঈদ, উহা রমযানের ২১ তারিখে। "পুনরায় হযরত আলী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, "হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! রমযানের মর্যাদাপুর্ণ রাত্রি কোনটি?" তিনি বললেন, "হে আলী (রাঃ), উহা রমযানের ২৩ তারিখে। "পুনরায় হযরত সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, "হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! এই পবিত্র মাসে কোন রাত্রি শ'বে কদর?" হযরত বললেন, "আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ), রমযান মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে উহা অনুসন্ধান কর, তাহা হলে তুমি উহাকে পাবে।"

         অধিকাংশ ওলামা এটার উপর একমত। ইমাম আজম (রঃ) এর অনেক রেওয়াত হতে এই তারিখ প্রমানীত হয়েছে। হযরত আবু হানিফা (রঃ) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে শ'বে কদর দান করেছেন, "লাইলাতুল কদর" -এর ৯টি হরফ আছে এবং "লাইলাতুল কদর" সূরা কদরের মধ্যে ৩বার এসেছে। সুতরাং ৯ হরফকে ৩বার একত্র করলে ৩ X ৯ = ২৭ হয়। এতে ইঙ্গিত হয় যে অবশ্যই ২৭ তারিখের রাত্রিকে শ'বে কদর বলা হয়। অধিকাংশ বুজুর্গগন এই রাত্রিকে শ'বে কদর বলে মেনে নিয়েছেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি রমযান মোবারকের ২৭ তারিখ রাত্রিকে জিন্দা রাখে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য ২৭ হাজার বছরের এবাদতের সওয়াব লেখেন এবং তার জন্য বেহেশ্‌তে কত সংখক ঘর তৈরী করবেন তা আল্লাহ তা'আলাই জানেন।"

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

"যে ব্যক্তি রমযানের ২৭ তারিখ রাত্রিকে জিন্দা রাখবে, আল্লাহ তা'আলা কেয়ামতের দিন তাকে বেহেশ্‌তে নেবার জামীন হবেন।"

আল্লাহ তা'আলা ফরমান- "ইন্না আনজালনাহু !"

"হে মুহাম্মদ (সাঃ), আমি নিশ্চয়ই জীব্রাইল (আঃ) এর দ্বারা আপনার উপর উহাকে অর্থাৎ কুরআনকে নাজিল করেছি।"

বহু কিতাবে বর্ণিত আছে, যখন জীব্রাইল (আঃ) আল্লাহর তরফ থেকে সমস্ত কুরআন শরীফ একই সময়ে "লাওহে মাহফুজে" পৌছে দিয়েছিলেন, তখন শ'বে কদরের রাত্রি ছিলো। পুনরায় সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প অল্প করে হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর নাজিল করা হয়েছিলো।

তৎপর আল্লাহ তা'আলা ফরমান- "ফি লাইলাতিল কাদরি।"

"কুরআন কে "লাইলাতুল কাদরে" অর্থাৎ শ'বে কদরের রাত্রে নাজিল করেছি"

"ওয়া মা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি।"

"হে মুহাম্মদ (সাঃ)! আপনি কি জানেন, "লাইলাতুল কদর" অর্থাৎ শ'বে কদরের বউর্গী কি?"

"লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহরি।"

"শ'বে কদর হাজার মাসের রাত্রি হইতে উত্তম।" অর্থাৎ আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি এই রাত্রে এবাদত করবে, তাকে আমি হাজার মাসের এবাদতের সওয়াব হতেও বেশী সওয়াব প্রদান করবো।

এই রাত্রিকে আল্লাহ তা'আলা এই জন্য খাছ করেছেন যে, একদিন হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজ উম্মতের মধ্যে হজরত শামাউন (আঃ) (যিনি বনী ইসরায়েলদের মধ্যে খুব বড় একজন আবেদ অর্থাৎ এবাদতকারী ছিলেন) তার বিষয়ে একটি গল্প বলছিলেন। যিনি হাজার মাস এবাদত করেছিলেন এবং কাফেরদের সাথে জেহাদ করেছিলেন। আল্লাহর রাস্তায়ই জেহাদ করেছিলেন, তার গল্প খুব বড়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর আছহাবগন আফছোছ করে বললেন, "হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আপনার উম্মতের হায়াত এরুপ হবে না, তাহা হলে তারাও ওইরুপ এবাদত করতে পারতো।" হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তখন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তখন সূরা কদর নাজিল হলো।