রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০০৯

আহলান সাহলান মাহে রমযান…

আল্লাহ তায়ালা হযরত মোহাম্মদ (সঃ) উম্মতের উপর পবিত্র রমযান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি এই ফরজকে অমান্য করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“হে ঈমানদারগন! তোমাদের উপর রমযানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। নিশ্চয়ই তোমরা ধর্মভীরু হইবে”।

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেন- “যে ব্যক্তি পবিত্র রমযানের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের গোনাহসমূহ থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে সে যেন এই মূহুর্তে মা এর উদর হতে ভূমিষ্ঠ হলো”।

পবিত্র রমযান মাস অতিশয় বুজর্গী। হযরত মুসা (আঃ) মুনাজাত করেছিলেন- “হে প্রভূ! উম্মতে মোহাম্মদীকে তুমি কোন মাস প্রদান করবে”? উত্তর আসলো- “হে মুসা! আমি তাদেরকে রমযান মাস প্রদান করেছি”। হযরত মুসা (আঃ) আরজ করলেন- “হে প্রভূ, রমযান মাসের ফজিলত কি”? উত্তর আসলো- “পবিত্র রমযান মাসের ফজিলত সমস্ত মাসের উপর এমন, যেমন সমস্ত বান্দার উপর আমার ফজিলত।যে ব্যক্তি এই পবিত্র রমযান মাসে রোজা রাখবে, তার জন্য আমি সমস্ত মানুষের, সমস্ত পরীদের এবং সমস্ত সৃষ্টির এবাদতের পরিমান এবাদত তার আমলনামায় লিখবো”। হযরত মুসা (আঃ) আরজ করলেন- “হে প্রভু, আমাকেও উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে গ্রহন কর, তাহলে আমিও ওই সওয়াব হতে বঞ্চিত হবনা”। উল্লেখ্যঃ অনেক নবী-রাসুলগনই এই দোয়া করতেন, তাদের মধ্যে জানামতে কেবল হযরত ইসা (আঃ) এর দোয়া কবুল হয়, যার ফলে তিনি শেষ যামানায় উম্মতে মোহাম্মদী হয়ে পৃথিবীতে (জ়েরুজালেমে বায়তুল মুকাদ্দীসের কোন এক মিনারে অবতরন করে) ফিরে আসবেন।

আরও এরকম বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি পবিত্র রমযানের রোজা রাখবে, সমস্ত ফেরেশতা, সমস্ত পশু, কীট-পতঙ্গ ও যত প্রানী পৃথিবীর উপর আছে, এমন কি বৃক্ষলতাও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি রমযান মাসে রোজা রাখে, তাকে আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন একটি যমরূদ পাথরের বাড়ী প্রদান করবে। ঐ বাড়ীর এক হাজার দরজা হবে। প্রত্যেক দরজার সামনে একটি বৃক্ষ হবে। তুমি যদি একশত বৎসর পর্যন্ত এই বৃক্ষে আরোহন করে ছায়ায় ছায়ায় ফির, তারপরেও তুমি তার ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেনা”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি রমযান মাসে একদেরহাম ছদকা দিবে, তার অন্য মাসের ছদকা থেকে হাজার দেরহাম ছদকার চাইতেও উত্তম ছদকা হবে”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি রমযান মাসে জুম’আর দিনে এবাদত করে বা কুরআন শরীফ পাঠ করে, সে হাজার বৎসরের চেয়েও বেশী এবাদতের সওয়াব পাবে”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোজা রাখে ও তার সন্তান-সন্ততি নিয়ে ইফতার করে, তাহলে তাকে আল্লাহতায়ালা এত সওয়াব প্রদান করবেন যে, সে যেন মক্কা, মদীনা ও বাইয়তুল মুকাদ্দীসে রোজা রাখলো। যে ব্যক্তি মক্কা শরীফে রোজা রাখে, সে ৭০ হাজার হজ্জের, ৭০ হাজার ওমরার এবং ৭০ হাজার রমযান মোবারক মাসের সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি মদীনা শরীফে রোজা রাখে, তাকে আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক ঈমানদারের নেকীর পরিমান সওয়াব প্রদান করবেন এবং ওই পরিমান বদ তার থেকে দূর করে বেহেশতে ওই পরিমান উন্নতি দান করবেন। যে ব্যক্তি বায়তুল মুকাদ্দীসে রোজা রাখে, তার জন্য সাত আসমানের ও পৃথিবীর ফেরেশতাগন ক্ষমা প্রার্থনা করেন”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি রমযান মাসে খাছ আল্লাহর জন্য রোজা রাখে, সে যেন ছয়শত হাজার বন্দীকে আযাদ করলো, ছয়শত হাজার উট কোরবানী করলো এবং ছয়শত হাজার বৎসরের এবাদত করলো”।

হযরত খাজা মুজাফফর কোহস্তানী (রাঃ) এর নিকট রোজা কিছু কারনে পছন্দনীয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

প্রথমতঃ রোজা রুহের ও দিলের অর্থাৎ উভয়কেই স্মরনের দিকে লিপ্ত রাখে।

দ্বিতীয়তঃ রোজা বিবেকের বিপরীত সমুদয় কুকর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখে।

তৃতীয়তঃ রোজা নফস্‌ আম্মারার অর্থাৎ পানাহার ও যৌন উত্তেজনার নিবৃত্তি অর্থাৎ সংযম প্রদান করে।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “রোজা ছবরের অর্ধেক, ছবর ঈমানের অর্ধেক”।

ইমাম মুহাম্মদ (রাঃ) বলেছেন- চোখের রোজা এই যে, উহা দ্বারা মন্দ বস্তু না দেখা অর্থাৎ নিজ চোখকে নেক কাজের দিকে ফেরানো। অর্থাৎ উহা দ্বারা কোর’আন মজীদ ও হাদীস শরীফ দেখে পড়া, সৎ লোকের মুখদর্শন করা, কুদৃষ্টি না করা। তিনি বলেছেন- কানের রোজা এই যে, উহার দ্বারা গুনাহের কথা ও কুকথা শ্রবন না করা এবং উহা দ্বারা আল্লাহ ও রাসুলের (সঃ) কথা শ্রবন করা। জীহবার রোজা এই যে, ইহা দ্বারা সর্বত্রই আল্লাহ ও রাসুলের (সঃ) নাম প্রচার করা, কোন বৃথা কথা না বলা। বর্ণিত আছে যে, খুব কম কথা বলা জীহবার রোজা। যে ব্যক্তি বেশী কথা বলে, সে ব্যক্তি দুরাবস্থায় পড়ে। ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী (রঃ) নিজের গ্রন্থাবলীতে লিখেছেনঃ-

হার ছুখুন বিছিয়ার গোইয়াদ, দর বিগত উফতাদ

অর্থাৎ- যে কথা বহুবার হয়, তা গীবতের অন্তর্গত হয়ে পড়ে। মুখের ও হাতের রোজা এই যে, উহা দ্বারা কোন শরীয়ত বিরোধী ও কোন গুনাহের কাজ না করা। বরং উহা দ্বারা এমন কাজ করা চাই, যাতে পরকালের ভালো হয়। পায়ের রোজা এই যে, উহাকে এবাদতের দিকে ফিরানো। অর্থাৎ উহা দ্বারা জামাতের নামায পড়তে যাবে অথবা ওয়াজ-নছীহত শুনতে যাবে। সমস্ত শরীরের রোজা এই যে, নিজের সমস্ত শরীরকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করে দিবে, এই ইচ্ছায় সর্বদা প্রস্তুত থাকা।

শাহ আহম্মদ কাশানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন- “মানুষের উচিৎ নিজের হাত, পা চোখ ও মন ইত্যাদি হারাম ও মাকরূহসমুহ থেকে সংযত রাখা। অন্যথায় ঐগুলির দরুন জ়াহান্নামে যেতে হবে। এর একটি শর্ত আছে যে, রোজার মধ্যে ইফতারের সময় ইফতার করবে, হালাল রুজী দ্বারা এবং তাও বেশী খাবে না। প্রতিদিন একই পরিমান খাবে; সবসময় মনকে ভয় ও ভরসার মধ্যে রাখবে।

“নাফিউল খালায়েক আমলিয়তে কোর’আন” থেকে সংকলিত।

কোন মন্তব্য নেই: