বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০০৯

অনন্য সুযোগের রাত - শবে’এ বরাত

হযরত আবুবকর সিদ্দিকী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “হে মানবগণ! তোমরা শা’বান মাসের মধ্যরাত্রিতে অর্থাৎ শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে উঠো! ওই রাত্রি অত্যন্ত পবিত্র। ওই রাত্রে আল্লাহ্‌তায়ালা বলেন, “হে মানবগণ, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেহ আছে যে তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও? আমি ক্ষমা করিয়া দিবো”।” সুতরাং শা’বানের রাত্রি অতি বরকতের রাত্রি। যে ব্যক্তি এইরাত্রে এবাদত করে সে, বহুত ছওয়াব পাইবে।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমাকে জ়িবরাইল (আঃ) উপদেশ দিয়েছেন যে, আপনার উম্মতদিগকে বলে দিন যে, তারা যেন শবে-বরাতকে জিন্দা রাখে, তা হলে তারা যেন শবে-কদরকেও জিন্দা রাখলো।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ১৫ শা’বানের রাত্রিতে আল্লাহ্‌তায়ালা সমস্ত এবাদতকারীকে, নেককারকে ও বদকারকে মাফ করে দিবেন। কিন্তু যাদুকরকে, গনককে, কৃপণকে, পিতা-মাতাকে কষ্ট-প্রদানকারীকে, শরাবখোরকে, জেনাকার পুরুষ ও স্ত্রী-লোককে এবং মাদকদ্রব্য সেবনকারীকে মাফ করবেন না। তবে তওবা (জীবনের তরে আর কখনও সেই কাজ করবেনা এই বলে অনুতাপ করে আল্লাহ্‌ গাফুরুররাহীমের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) করলে মাফ করবেন।

১৫ই শা’বানের রাত্রে আল্লাহ্‌তায়ালা মুসলমানদিগকে বলেন, “যে আমার নিকট মাফ চাইবে, তাকে মাফ করবো”। আল্লাহ্‌তায়ালা বলেছেন, “উক্ত তারিখে যে আমার নিকট সাস্থ্য প্রার্থনা করবে, আমি তাকে সাস্থ্য প্রদান করবো। যদি গরীব থাকে এবং আমার কাছে ধনী হবার জন্য প্রার্থনা করে, তা হলে আমি তাকে ধনী করে দিবো”।

আমলঃ

১৫ই শা’বানের রাত্রিতে সন্ধ্যার পরে গোসল করা উচিৎ। এটা মোস্তাহাব। হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে এবাদতের নিয়তে গোসল করে, তার জন্য প্রত্যেক ফোটা পানিতে ৭০০ রাক্‌য়াত নফল নামাযের ছওয়াব লেখা যাবে”। গোসলের পর ২ রাক্‌য়াত তাহইয়াতুল ওয়াজু নামায পড়বে। প্রত্যেক রাক্‌য়াতে সুরা ফাতিহার পর ১ বার আয়াতুল কুরসি্‌ ও ২৫ বার সুরা এখলাস্‌ পড়বে। তাহইয়াতুল ওয়াজু হতে অবসর হয়ে আট রাক্‌য়াত নফল নামায পড়বে। প্রত্যেক রাক্‌য়াতে সুরা ফাতিহার পর ১ বার সুরা কদর ও ২৫ বার সুরা এখলাস্‌ পড়বে। হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই নামায শা’বানের রাত্রিতে অর্থাৎ ১৫ তারিখের রাত্রে আদায় করবে, তার সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ হয়ে যাবে এবং নব-প্রসূত শিশুর মত গুনাহ্‌ হতে পবিত্র হয়ে যাবে”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রে প্রতি রাক্‌য়াতে সুরা ফাতিহার পর ৫০ বার সুরা এখলাস্‌ পাঠ করতঃ ৪ রাক্‌য়াত নফল নামায শেষ করে ও ১৫ তারিখে রোযা রাখে, আল্লাহ্‌তায়ালা তার ৫০ বৎসরে গুনাহ মাফ করে দিবেন”।

অন্য এক রেওয়াতে আছে, যে ব্যক্তি ১৫ই শা’বানের রাত্রে প্রতি রাক্‌য়াতে সুরা ফাতিহার পর ১০ বার সুরা এখলাস্‌ পাঠ করতঃ ১০০ রাক্‌য়াত নফল নামায শেষ করে, তার সমস্ত গুনাহ আল্লাহ্‌তায়ালা মাফ করে দিবেন এবং তার ১০০ অভাব পূর্ণ করে দিবেন, তার জন্য বেহেশ্‌ত হালাল ও দোযখ হারাম করে দিবেন।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শা’বানের ১৫ তারিখের রাত্রে প্রতি রাক্‌য়াতে সুরা ফাতিহার পর যেকোন সুরা অথবা সুরা এখলাস্‌, সুরা কাফেরুন, সুরা নাছ ও সুরা ফালাক দ্বারা ১৪ রাক্‌য়াত নফল নামায এবং নামাযের মধ্যে আয়াতুল কুরসি্‌ ১ বার ও লাকাদ জা-আকুম শেষ পর্যন্ত ১ বার পাঠ করতঃ সালাম ফিরিয়ে যে দোয়া প্রার্থনা করবে, সেই দোয়াই কবুল হবে”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ১৫ই শা’বানের দিনে রোযা রাখবে, সে দোযখের আগুন হতে মুক্তি লাভ করবে”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শা’বান মাসের শুক্রবার প্রতি রাক্‌য়াতে সুরা ফাতিহার পর ৩০ বার সুরা এখলাস্‌ দ্বারা ৪ রাক্‌য়াত নফল নামায পড়ে, সে একটি হজ্জ ও একটি ওমরার ছওয়াব পাবে”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ১৫ই শা’বানের রাত্রে ১০০ বার ও দিনে ১০০ বার আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে, তার উপর দোযখের আগুন হারাম হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্‌তায়ালা তাকে বেহেশ্‌তে দাখিল করবেন”।

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শা’বান মাসের দিনে ও রাত্রে আমার উপর ১০০ বার দরূদ পড়বে, আল্লাহ্‌তায়ালা তাকে দোযখের আগুন হতে বাচাবে এবং কেয়ামতের দিন আমি সকলের আগে তার জন্য শাফায়াত করবো”।

১০

হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শা’বানের মাসে ৩ হাজার বার দরূদ শরীফ পড়বে, তাহা হলে কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত করা আমার জন্য ওয়াজীব হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ্‌!

১১

হযরত আবুল কাছেম ছাফ্‌ফার (রাঃ) হতে বর্ণিত, “আমি হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে খাবে দেখিলাম। আমি বললাম, হে খাতুনে জান্নাত! আপনি এমন কি বস্তু ভালোবাসেন, যা আপনার রুহের জন্য দান করিব? ফাতেমা (রাঃ) বলিলেন, হে আবুল কাছেম! আমি শা’বান মাসে ৮ রাক্‌য়াত নামায ভালোবাসি। উহা ৪ বৈঠকে ও ১ সালামে পড়তে হবে। প্রত্যেক রাক্‌য়াতে সুরা ফাতিহার পর সুরা এখলাস্‌ ১১ বার করে পড়বে! যে ব্যক্তি উক্ত প্রনালীতে এই নামায পড়বে এবং আমাকে ছওয়াব বখশীশ দিবে; আমি তার জন্য শাফায়াত না করে কখনও বেহেশ্‌তে এক পা-ও দিব না। এই নামাজ শা’বান মাসের যে কোন রাত্রে আদায় করিবে। যদি এই মাসের প্রথম ভাগের রাত্রে পড়ে, তা হলে খুবই উত্তম অথবা যে কোন রাত্রে ইচ্ছা পড়তে পারবে”।

হাদীছ শরীফে এসেছে-

“যে ব্যক্তি শা’বানের ১৫ তারিখে রোযা রাখবে, তাকে কখনও দোযখের আগুন স্পর্শ করবে না”।

১৫ শা’বানে আসমান থেকে লক্ষ লক্ষ ফেরেশতে দুনিয়ায় নেমে আসেন এবং ওই রাত্রে এবাদতকারীদেরকে দেখেন এবং তাদের জন্য রোজ কেয়ামত পর্যন্ত ছওয়াব লিখতে থাকেন, তারপরেও সেটা পূর্ণ হবেনা। পরে রোজ কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌তায়ালা ফেরেশতাদেরকে ডেকে বলবেন, “হে ফেরেশতাগন, তোমরা এখন ছওয়াব লেখা বন্ধ করো। আমি বিনা হিসাবে আমার বান্দাকে বেহেশ্‌তে নিয়ে যাবো। তোমরা আমার বান্দাদের ছওয়াব লিখে শেষ করতে পারবেনা। বরং আসমান জমীনের ফেরেশতারা একত্রিত হয়েও যদি ছওয়াব লিখতে থাকো, তারপরেও এটা পূর্ণ হবেনা।

পরিশেষে আমার কিছু কথা-

আলহামদুলিল্লাহ! আমি আল্লাহ্‌র শুকুর গুজার করে শেষ করতে পারবোনা তার একটা কারন হলো- আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এই আমি যদি আজ মুসলমানের ঘরে না হয়ে কোন অন্য ধর্মের ঘরে হতাম! তাহলে সারা জীবন আমাকে কিছু চরম মিথ্যা বুনিয়াদের উপর বসে থাকতে হত, যার পরিনামও ভয়াবহ। আমি কিভাবে এ ধন্যবাদ জানাবো? এর কোন ভাষা আমার কাছে নেই।

কিন্তু তারপরেও, মুসলমান হয়েও কি আমি পুরোপুরি নিরাপদ আছি, আমার মনে হচ্ছে না। তবে হ্যা, অন্য ধর্মে থাকলে হয়তো ভবিষ্যতের ভয়বহতাটা জানতে পারতামনা, এখন বরং কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি, এটুকুই পার্থক্য। তবে সেই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার বহু সুযোগ আমাদের দেওয়া হয়, যেটাও আমরা হেলায় হারিয়ে দিই। তাই আমি এই হাদীছ পাঠকদের অনুরোধ করবো- সবগুলো না পারেন, একাধিকও যদি না পারেন, অন্তত একটা আমল করেন, যেটা আপনার কাছে সহজ মনে হয়। আর যেহেতু এই রাত্রে দোয়া কবুলের একটা সুযোগ আছে, যেটা আমরা অনেক ভাবে ব্যবহার করতে চাই, আমি বলবো সেগুলোর চাইতে এই প্রার্থনাটা অন্যতম মুখ্য হওয়া উচিৎ-

ক) “ইয়া আল্লাহ্‌, আমার অতীতের সমস্ত গোনাহ্‌ থেকে রেহাই দিয়ে, ভবিষ্যতের সমস্ত ফরয ও সুন্নাত সঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দাও মালিক”!

খ) “সমস্ত হারাম থেকে হেফাজত করে আমাকে হালাল বস্তু দান করো”!!

গ) “আমার মনকে তোমার পথের দিকে সুপরিবর্তীত করো!!! আমীন”।

বিশেষ করে আমার মতে সুরা ফাতিহার শেষ ২ আয়াত এখানে সবচেয়ে উপযোগী প্রার্থনা।

সুরা ফাতিহাঃ

৬ষ্ঠ আয়াত- “আমাদিগকে সরল পথ দেখাও”।

৭ম বা শেষ আয়াত- “সে সমস্ত লোকেদের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট”।

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন। আমীন।

কোন মন্তব্য নেই: